বাইয়াত এর ব্যাখ্যা ও গুরুত্ব
বাইয়াত” শব্দের উৎপত্তি হয়েছে,
“বাইয়ুন” শব্দ থেকে।“বাইয়ুন” শব্দের
আভিধানিক অর্থ হচ্ছে “ক্রয়-বিক্রয়”
এখানে এই “ক্রয়-বিক্রয়” মানে হচ্ছে
আমার আমিত্বকে আল্লাহর রাহে
রাসূলের নিকট গিয়ে কোরবান করে
দিলাম,বিলিন করে দিলাম,বিক্রি
করে দিলাম। আমার আমিত্ব, আমার যত
অহংকার আছে, অহমিকা আছে, আমি
আমি যত ভাব আছে সমস্তকিছু আল্লাহর
রাসুলের কাছে গিয়ে আল্লাহর রাহে
সম্পূর্ণরূপে উৎসর্গ করে দেয়া, কোরবান
করে দেয়া , বিক্রি করে দেয়া এবং
পক্ষান্তরে রাসূলে পাঁক(দ:)র কাছ
থেকে কোরআন সুন্না ভিত্তিক জীবন
ব্যবস্থা খরিদ করে, সমস্ত ইবাদতের
মালিক আল্লাহ, সেজদার মালিক
আল্লাহ, কুল্লু মাখলূকাতের মালিক
আল্লাহ, এই দৃঢ় ঈমানে ঈমানদার হয়ে
যাওয়া, এটাকেই বলা হয় বাইয়াত বা
“ক্রয়-বিক্রয়” ।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন, আল্লাহর রাসূল
(দ:) তো এখন আমাদের মাঝে জাহেরা
অবস্থায় নাই, এখন আমাদের কি উপায়
হবে, তাঁর সমাধান আল্লাহ কোরআন
শরীফের মাধ্যমে দিয়েছেনঃ
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
“আতিওয়াল্লাহা আতিওয়া রাসূলা
ওয়া ওলি লামরে মিনকুম”
আল-কোরআন।
অর্থঃ মোমেন বান্দারা , তোমরা
আমি আল্লাহর তাবেদারি কর, তোমরা
আমার রাসূলের তাবেদারি কর, এবং
আমার আউলিয়া-আল্লাহর তাবেদারি
কর।
অতএব, আওলাদে রাসূল বা আল্লাহর
অলিদের(কামেল পীর বা মুর্শিদ,)
তাবেদারি করা মানে আল্লাহর
রাসূল(দ:) এর তাবেদারি করা । আল্লাহর
রাসূলের তাবেদারি করা মানে
আল্লাহর তাবেদারি করা। এটা
কোরআন বলছে। ওলী আল্লাহ,
আওলাদের রাসূলের নিকট বাইয়াতে
রাসূল গ্রহন করা বা বাইয়াত হওয়া
মানে রাসূলের নিকট বাইয়াত হওয়া।
আর রাসূলের নিকট বাইয়াত হওয়া
আল্লাহ বলছেন স্বয়ং আল্লাহর নিকট
বাইয়াত হওয়া। একথা কোরআন বলছে।
এখানে পীর ফার্সি শব্দ। পীর-মুরীদ এই
শব্দ দুটি ফার্সি শব্দ। পীর এর বাংলা
অর্থঃ বৃদ্ধ(জ্ঞানে বড়) লোক, মুরীদ
শব্দের বাংলা অর্থঃ ভক্ত হওয়া ।
“মানুষ” শব্দটি বাংলা হওয়ায় এটি
(“মানুষ” শব্দটি ) যেমন সরাসরি
কোরআনে নাই, ঠিক তদ্রুপ পীর- মুরীদ শব্দ
দুটি ফার্সি ভাষা হওয়ায় এই শব্দ দুটি ও
কোরআনে সরাসরি নাই। কিন্তু
“বাইয়াত” তো কোরআনে আছে, “ওলিল
আমর” তো কোরআনে আছে।
তাহলে যারা “বাইয়াত এ রাসূল”
অস্বীকার করে তাঁরা কি কোরআন
অমান্যকারী নয়???
যারা বাইয়াতে রাসূল(দ:)
অস্বীকারকারী পৃথিবীতে তাঁদেরকে
মোমেন মুসলমান হিসেবে আমরা মানি
না। তবে যারা বায়াত
অস্বীকারকারী তাঁদেরকে বলা হয় লা
মাজহাবি, মোজাবযাবিন, আহলে
হাদিস, সালাফি, খারিজি, ওহাবী,
মুওদুদী, কাদীয়ানী,
রাফীজি,তবলিগী, হেফাজতী
ইত্যাদি ইত্যাদি ৭২ টি মাজহাব বা দল
উপদল পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে
ছিটিয়ে আছে। এদের প্রত্যেকেই
কোরআনের অনুসারী, আল্লাহ মানে,
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, মসজিদ-
মাদ্রাসায় যায়, আরবী ভাষা জানে
বিধায় আরবী, উর্দু, ইংরেজী,
বাংলায় বিভিন্ন ভাষায় তাঁদের
মতামত, তাঁদের আকিদা প্রচারে লিপ্ত
রয়েছে। সঠিক মুসলমান হতে হলে
আপনারা যারা বায়াতের বা মুরিদ
বিরোধী যে মত প্রকাশ করেছেন এবং
আল্লাহর প্রিয় বন্ধু আওলাদে রাসূল
(দ:) ,পীর-মুরশিদ, অলি আউলিয়াদের
বিরুদ্ধে যে মত প্রকাশ করেছেন, সে মত
থেকে সরে এসে কোরআনের হুকুম মত
আপনারা অতিসত্তর একজন কামেল পীর
মুর্শিদের হাতে হাত রেখে কোরআন
সুন্নাহ মোতাবেক বায়াতে রাসূল গ্রহণ
করে মোমেন মুসলমান হিসেবে গণ্য
হওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এরকম অসংখ্য তাবেয়ীন এবং হযরত
আওলাদে রাসূল (দ:) হযরত ইমাম হাসান
(রাঃ), হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ), হযরত
ইমাম জয়নাল আবেদিন (রাঃ), হযরত
ইমাম বাকের (রাঃ), হযরত ইমাম জাফর
সাদেক (রাঃ), হযরত ইমাম কাজেম
(রাঃ), হযরত ইমাম আলী রেজা (রাঃ)
সমেত অসংখ্য তাবেয়ীনদের হাতে
বাইয়াত(মুরীদ) হওয়ার মাধ্যমেই সারা
বিশ্বজাহানে ইসলাম প্রচার হয়েছে,
প্রসার হয়েছে।
আচ্ছা, আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়,
আপনি আল্লাহ পেলেন কিভাবে?
কোরআন পেলেন কিভাবে? জবাব কি
দিবেন বলেন। আপনি তো আল্লাহকে
দেখেন নাই, রাসূল (দ:) কে দেখেন নাই,
আল্লাহ কি আপনার কাছে এসে
বলেছেন যে কোরআন আমি আল্লাহর
বাণী? আল্লাহ যে একজন আছেন তা
আপনি সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে
শুনেন নাই বা জানেন নাই, আল্লাহ
এসে আপনার কাছে সরাসরি বলে নাই
যে আমি তোর সৃষ্টিকর্তা। বলেছে???
তা জেনেছেন প্রথমত আপনার বাবা-
মা, ভাই-বোন, পাড়া-প্রতিবেশী,
আত্তীয়-স্বজন, শিক্ষক,মসজিদের ইমাম,
বা ঊস্তাদ থেকে।তারপর বাবা-মা
বা,শিক্ষক,মসজিদের ইমামের(মাধ্যম)
কাছে কোরআন পড়তে শিখছেন,হাদিস
পড়তে শিখেছেন। তারপর কোরআন
হাদিস থেকে আল্লাহ সম্পর্কে
জেনেছেন। তাই নয় কি???
তাহলে বাবা-মা, ভাই-বোন, পাড়া-
প্রতিবেশী, আত্তীয়-স্বজন,
শিক্ষক,মসজিদের ইমাম ইত্যাদি মাধ্যম
ছাড়া আল্লাহ যে একজন আছেন
একথাটাই কেউ জানতে পারেন নাই,
সেখানে বিশেষ মাধ্যম(যিনি আল্লাহ
প্রাপ্ত হয়েছেন) ছাড়া কি করে
আল্লাহ পাওয়া সম্ভব???
জবাব দিন।
ইংরেজী পড়ার জন্য আপনি, যিনি
ইংরেজীতে দক্ষ শিক্ষক (মাধ্যম) বা
জ্ঞানী তাঁর কাছে যান ইংরেজী
শিখতে। লক্ষ করুন, ইংরেজি বই ও
ইংরেজি গাইড থাকা স্বত্তেও আপানর
একজন ইংরেজী শিক্ষকের(মাধ্যমের)
দরকার হয়।গণিত পাড়ার জন্য আপনি,
যিনি গণিতে দক্ষ শিক্ষক (মাধ্যম) বা
জ্ঞানী তাঁর কাছে যান গণিত
শিখতে। লক্ষ করুন, গণিত বই ও গণিত গাইড
থাকা সত্ত্বেও আপানর একজন গণিত
শিক্ষকের(মাধ্যমের) দরকার হয়।তাহলে
মাধ্যম ছাড়া যে আল্লাহর অস্তিত্ব
সম্পর্কেও আপনি জানতে পারেন নাই
সেই আল্লাহকে পেতে হলে কোরাআন,
হাদিস থাকা সত্ত্বেও কোরআনের হুকুম
মত মুর্শিদ বা অলি-আল্লাহ বা পীর
(যিনি আল্লাহ প্রাপ্ত হয়েছেন) মাধ্যম
ছাড়া কিভাবে আল্লাহ পাওয়া
যাবে ?????????????????????
সাহস থাকলে জবাব দিন।
আপনাদের জানিয়ে দিতে চাই, একজন
আলেমের নিকট গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ না
করলে যেমন আলেম হওয়া যায় না, একজন
ডাক্তারের নিকট গিয়ে শিক্ষা না
নিলে বা ট্রেনিং না করলে যেমন
ডাক্তার হওয়া যায় না, একজন জ্ঞানী
ব্যক্তির সংস্রবে না গেলে যেমন একজন
জ্ঞানী হওয়া যায় না ইত্যাদি। তদরুপ
আপনাদেরও উচিৎ একজন জ্ঞানী
ব্যক্তির সান্নিধ্যে গিয়ে আপনাদের
বিভিন্ন সময়ে উল্লেখিত “পীর-মুরিদ”
বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা। আপনাদের
কোরআনের আর একটি আয়াত স্মরণ
করিয়ে দিচ্ছিঃ
“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম”
“ইয়া আইয়্যুয়াল্লা জ্বীনা আমানু ওয়া
কুনু মা সাদেক্বীন”
আল- কোরআন।
অর্থঃ হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা আমি
আল্লাহর সান্নিধ্যে আসতে চাইলে
সাদেকীন,সত্যবাদী, আওলিয়ায়ে
কামেলিনদের সাথী হও।
(সুবাহানাল্লাহ)
মহান আল্লাহ-পাক হুযুরে পুনুর (দ:) এর
উসিলায় আমাদের প্রত্যেককে
হেদায়ত দান করুন।
হযরত সায়্যিদুনা শায়খুশ শুয়ূখ শিহাবুল হক
ওয়াদদ্বীন সোহারাওয়ার্দী কুদ্দিসা
সিররুহু ‘আওয়ারিফুল মা’রিফ’ শরীফে
বলেছেন, আমি সম্মনিত অলীগণকে
বলতে শুনেছি,
“যে ব্যক্তি সফলকাম লোকের সাহচর্য
লাভ করেনি, সে সফলকামী হয় না।”
দ্বিতীয়তঃ পীর ছাড়া ব্যক্তির পীর
শয়তান-বিষয়ে ‘আওয়ারিফুল মা’রিফ’
গ্রন্থে বলা হয়েছে, সায়্যিদুনা
বায়েজীদ বোস্তামী রাদ্বিআল্লাহু
তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেছেন,
“যার পীর নেই, তার পীর শয়তান।”
[ ইমামে আহলে সূন্নাত, আ’লা হযরত,শাহ
ইমাম আহমদ রেযা খান (রহ.) এর
‘ফাতাওয়া-ই আফ্রিকা’ পৃ.১২২]
@
##
হযরত ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
তিনি রাসূল (দ:) থেকে বর্ণনা করেন।
রাসূল (দ:) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি বায়াত গ্রহণ না করে মৃত্যুবরণ
করলো সে যেন জাহেলিয়াতের
মৃত্যুবরণ করলো।”
[মুসলিম শরীফ, হাদিস নং-৪৬৫৯]
“মান লা শাইখা লাল্হ ফিস শায়খিশ
শায়তান’
অর্থাৎ: যারা বায়াত গ্রহণ করেনি,
তাদেরকে হাশরের দিন ‘শয়তানের দল
বলে ডাকা হবে।’
..
.. “বায়াত ভঙ্গকারী অপবিত্র তথা
তারা জীবাত্তার গুন-খাছিয়তে আবৃত
থাকবে , যার পরিনাম হলো
জাহান্নাম। ”
বুখারী ৬ষ্ঠ খন্ড
আল্লাহ সবাইকে জমানার কামেল
পীরের কাছে বায়াত হওয়ার তাওফিক
দান করূন।
(সংগৃহীত)